মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সব রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ক্রমান্বয়ে অন্যান্য ক্যাম্প বন্ধ করে দেওয়া হবে।
একটি বাড়ি একটি খামার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০১7
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এ কথা জানান।
গত ২৫ আগস্ট থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৫ লক্ষাধিক জানিয়ে ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ক্যাম্পের ভেতরে নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা, খাদ্য সরবরাহ, স্যানিটেশন, রেজিস্ট্রেশন ও চিকিত্সা দেয়াসহ সব কাজ সুচারুভাবে করার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ক্যাম্পের বাইরে পাহাড়ি এলাকা ও অন্যান্য স্থানে যেসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। ক্যাম্পের চারপাশে বেড়া দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
কুতুপালং ক্যাম্পকে ২০টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক ব্লকের জন্য একটি প্রশাসনিক ও পরিসেবা ইউনিট ও একটি গোডাউন স্থাপন করা হচ্ছে। এতে সব ধরনের সেবা দেয়া সহজ হবে। পরবর্তী সময়ে ব্লকগুলো ক্যাম্পে রূপান্তর করা হবে। ব্লকের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য একজন করে কর্মকর্তা পদায়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মোট এক লাখ ৫০ হাজার অস্থায়ী শেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭৫ হাজারেরও বেশি শেড নির্মাণ করা হয়েছে। দেশি বিদেশি এনজিওদের সহায়তায় দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে বলে তিনি জানান। ত্রাণমন্ত্রী বলেন, ক্যাম্পের ভেতর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নতুন পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হবে এবং পর্যাপ্ত আনসার সদস্য মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া ক্যাম্পে নতুন ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট স্থাপন করা হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪টি গোডাউন নির্মাণের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ৫টি গোডাউন নির্মিত হয়েছে। বাকি ৯টির নির্মাণ কাজ এ সপ্তাহে শেষ হবে। এর বাইরে ২০টি ব্লকে ২০টি গোডাউন নির্মাণ করা হবে।
তিনি বলেন, শরণার্থীদের জন্য সাড়ে তিন হাজার টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে, আরো সাড়ে ১৭ হাজার টয়লেট স্থাপনের কাজ চলছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এক হাজার ৯০০টি স্যানিটারি টয়লেট ও এক হাজার ৫২৮টি টিউবওয়েল স্থাপন করেছে। ১৪টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও সাতটি ওয়াটার ট্রাকের মাধ্যমে খাবারের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্ধিত ক্যাম্প এলাকা আলোকিত করতে ৯ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুত্লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ক্যাম্পে পরিবেশবান্ধব চুলা সরবরাহ করা হচ্ছে।
প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার রোহিঙ্গার রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে জানিয়ে ত্রাণমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত ৬১ হাজার রোহিঙ্গার বায়োম্যাট্রিক নিবন্ধন করা হয়েছে। এ কাজে সেনাবাহিনী ও পাসপোর্ট অধিদফতর সহযোগিতা করছে। আগামী দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে সব রোহিঙ্গার নিবন্ধন শেষ করার আশা করছেন ত্রাণমন্ত্রী।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১৪ ও ১৯ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে দুই দফা সমন্বয় সভা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখান থেকে সব মন্ত্রণালয়কে ২২টি নির্দেশনা পাঠানো হয়। এর আলোকে সব মন্ত্রণালয় দিনরাত কাজ করে রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসছে।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব শাহ কামাল বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক’ বলতে হবে।
No comments:
Post a Comment